লাদাখ সীমান্ত থেকে সেনা সরাচ্ছে ভারত ও চীন

উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশের সেনাবাহিনীর পিছু হটার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে গত রোববার দোভাল ও ওয়াং দীর্ঘ সময় ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন। সেই আলোচনায় দুই দেশ সম্মত হয়, কেউ মতপার্থক্যকে শত্রুতায় রূপান্তরিত করবে না। দুই দেশই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা কঠোরভাবে মেনে চলবে। কোনো দেশই একতরফাভাবে সেই রেখা লঙ্ঘনের চেষ্টা করবে না। গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ওই আলোচনার সারাংশ প্রচার করে। তাতে বলা হয়, দুই দেশই স্বীকার করেছে, যথাসম্ভব দ্রুত উত্তেজনা কমানো দরকার। সীমান্ত সেনামুক্ত হওয়া প্রয়োজন। দুই দেশই দ্রুত তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হবে। দোভালের সঙ্গে বৈঠকে উত্তেজনা প্রশমনে সেনা সরানো নিয়ে সম্মত হওয়ার কথা চীনও স্বীকার করেছে। তবে সেনা সরে গেছে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলেনি। গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে বলেছে, ‘উত্তেজনা প্রশমন ও সেনা সরানোর লক্ষ্যে সীমান্ত বাহিনী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে।’
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার পর সেনা প্রত্যাহারের খবর।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, চীনের সেনারা গালওয়ানে এক থেকে দুই কিলোমিটার পিছিয়ে গেছে। ১৫ জুনের সংঘর্ষস্থল গালওয়ানের পিপি–১৪ পয়েন্ট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার সরেছে। পিছিয়েছে ভারতীয় বাহিনীও। কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, প্যাংগং লেকের উত্তরে চীনা অবস্থান এখনো অপরিবর্তিত। সেখানে বহু স্থানে চীন কংক্রিট অবকাঠামো তৈরি করেছে। ডেপসাং এলাকা থেকেও চীন এখনো পিছু হটেনি। তবে গালওয়ানে দুই দেশই এক ‘বাফার জোন’ তৈরিতে সম্মত হয়েছে।
ভারতের সামরিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, চীন বরাবরই বিতর্কিত এলাকায় দুই পা এগিয়ে এক পা পিছিয়ে যাওয়ার নীতি নিয়ে থাকে। গালওয়ানের একাধিক এলাকাতেও তাই করতে চায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল সৌমিত্র রায়ের বিশ্বাস, পূর্ব লাদাখেও চীন তেমনই করতে চাইছে। অনেকটা ঢুকে এসে কিছুটা পিছিয়ে যাবে। তাঁর মতে, ভারতের উচিত হবে না তা করতে দেওয়া। চীনকে দখলে রাখা এলাকা থেকে পুরোপুরি সরাতে ভারতকে ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি সম্প্রতি লাদাখ সফরে গিয়ে সেই কাজটাই শুরু করেছেন। চীনের ওপর রাজনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করেছেন। অর্থনীতিতেও চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। মোদি স্বনির্ভরতার স্লোগান নতুনভাবে তুলেছেন। চীনা পণ্য বর্জনের আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ৫৯টি চীনা অ্যাপ। বহু সরকারি প্রকল্পে চীনা সংস্থার যোগদানে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সম্মিলিত চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে চীনও পিছিয়ে নেই। তাদের দিক থেকেও ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। যেমন সেনা পেছানোর খবরের মধ্যেই জানা যাচ্ছে, পাকিস্তানকে চারটি সশস্ত্র ড্রোন সরবরাহ করতে চলেছে।